অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দ্রুত করোনা টিকা নেওয়ার আহ্বান

টানা দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে সারা বিশ্ব। করোনার টিকা আবিষ্কার হলেও প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে পুরোপুরি মুক্তি মেলেনি। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অবশ্য করোনায় আক্রান্ত হলেও এর প্রভাব সবার ওপর সমান ভাবে পড়ে না। তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ওপর করোনা খারাপ প্রভাব ফেলে এমন ধারণাও প্রচলিত রয়েছে।

তবে করোনা টিকা নিলে অন্তঃসত্ত্বা নারী বা অনাগত সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। আর তাই করোনা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দেরি না করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সোমবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনা টিকা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণে দেরি না করতে সরকারিভাবে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে যুক্তরাজ্য। ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই যেসব অন্তঃসত্ত্বা নারী করোনা টিকা নিয়েছেন, তারা এর পক্ষে রেডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাবেন।

ব্রিটিশ সরকারের দাবি, করোনা টিকা নিরাপদ এবং প্রজনন ক্ষমতার ওপরে এটি কোনো প্রভাব ফেলে না।

যুক্তরাজ্যের প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের ওপরে নজরদারি বিষয়ক সংস্থা ইউকে অবসটেট্রিক সার্ভেলেন্স সিস্টেম (ইউকেওএসএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে ৯৬ শতাংশেরও বেশি নারী কোভিড-১৯ টিকা নেননি।

এরপর গত ডিসেম্বর মাসে করোনা টিকা প্রদানের অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্থান দেয় যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাক্সিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন। করোনা মহামারির কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও সেসময় জানায় তারা।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা দফতর (ডিএইচএসসি) জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী নারীদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনকে সুস্থ করতে সহায়তা করার জন্য প্রি-টার্ম ডেলিভারি করতে কয় এবং তাদের পাঁচজনের মধ্যে একজনের শিশুর নবজাতক ইউনিটে সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

প্রি-টার্ম ডেলিভারি মূলত নির্ধারিত সময়ের আগেই কোনো শিশুর জন্ম দেওয়াকে বোঝানো হয়। আরও স্পষ্ট করে বললে, গর্ভধারণের সময়সীমা ৩৭ সপ্তাহ পূরণের আগেই সন্তান জন্ম দেওয়াকে প্রি-টার্ম ডেলিভারি বলা হয়ে থাকে।

২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাজ্যে গর্ভবতী বা হবু মায়েদের ফাইজার-বায়োএনটেক অথবা মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৪ হাজার গর্ভবতী নারী করোনা টিকার একটি ডোজ নিয়েছেন। অপর দিকে দু’টি ডোজই সম্পন্ন করা অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনিকোলজিস্ট-এ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন ড. জেন জারডাইন। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী এই প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।

তিনি বলছেন, ‘একজন চিকিৎসক এবং গর্ভবতী মা হিসেবে আমরা এখন খুব আত্মবিশ্বাসী হতে পারি যে, করোনা টিকা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে গর্ভবতী নারী এবং তার অনাগত সন্তানের জন্য সর্বোত্তম সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রদান করে।’

তার ভাষায়, ‘আমার মতো অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রতি খুব জোরালোভাবে আহ্বান থাকবে যে, আপনারা যদি এখনও টিকা না নিয়ে থাকেন, তাহলে আজই টিকা নিয়ে নেন।’

এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানায়, করোনা টিকা নিলে গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের অনাগত সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না।

করোনা টিকা নিলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম হতে পারে কিংবা সন্তানের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু সিডিসির সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমন কোনো উদাহরণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত ৪৬ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর এই সমীক্ষাটি চালানো হয়। এসব নারীর কেউ কেউ টিকার একটি ডোজ নিয়েছিলেন। কেউ কেউ দু’টি ডোজই। কেউ আবার সন্তান জন্মানোর আগপর্যন্ত কোনো টিকাই নেননি।

অনেকের সন্তানেরই ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়েছে। কিন্তু সন্তানের ওজন কম হওয়ার সঙ্গে টিকা নেওয়া বা না নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শরীরের অন্য সমস্যা বা জিনগত কারণেই মূলত সন্তানের ওজন কম হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম।

এসব বিষয় পর্যালোচনা করে সিডিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা টিকা গর্ভের ভ্রুণের ওপর প্রভাব ফেলে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন